নাটোরের বিখ্যাত খেজুরের পাটারী গুড়

নাটোরের খেজুরের পাটারী গুড়ের বৈশিষ্ট্য

নাটোরের পাটারী গুড় তৈরি হয় নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সংগৃহীত খেজুরের রস থেকে, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও কেমিক্যালমুক্ত প্রক্রিয়ায়। প্রতিটি গাছ থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রস সংগ্রহ করা হয়, যাতে রস ও গুড়ের মান থাকে একদম খাঁটি ও উচ্চমানের।

এই গুড়ের বিশেষত্ব হলো এর দানাদার টেক্সচার ও সমৃদ্ধ মিষ্টি স্বাদ। মুখে দিলেই গলে যায় মাটির ঘ্রাণে ভরা প্রাকৃতিক মিষ্টিতে। নাটোরের মাটি ও আবহাওয়া এই গুড়ের স্বাদকে করে তুলেছে অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় অনন্য।

আমরা তিন প্রকার গুড় সরবরাহ করি — পাটালি গুড়, দানাদার ঝোলা গুড় এবং তরল ঝোলা গুড়। সবধরনের গুড়ই ১ কেজি ও ২ কেজির স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ প্যাকেজিংয়ে পাওয়া যায়।

পাটারী গুড় তৈরির প্রক্রিয়া

নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত নাটোর অঞ্চলে চলে পাটারী গুড় তৈরির মৌসুম। সকালে গাছে কলসি বাঁধা হয় এবং সূর্য ওঠার আগে সংগ্রহ করা হয় তাজা খেজুরের রস। সেই রস পরিষ্কার পাত্রে ছেঁকে নেওয়া হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বড় মাটির চুলায় মাঝারি আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়।

ধীরে ধীরে রস ঘন হতে থাকে এবং যত্নসহকারে নেড়ে ফেনা সরিয়ে রাখা হয়। যখন রস সঠিক ঘনত্বে পৌঁছে যায়, তখন তা ছাঁচে ঢেলে ঠান্ডা করে তৈরি করা হয় পাটারী গুড়। পুরো প্রক্রিয়াটি হাতে করা হয়, কোনো প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যাল ছাড়াই।

পাটারী গুড়ের উপকারিতা

প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
রক্তস্বল্পতা দূর করতে ও শরীর গরম রাখতে কার্যকর।
হজমে সহায়ক এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। কৃত্রিম চিনি বা মধুর তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর বিকল্প।

 পাটারী গুড়ের ব্যবহার

পিঠা-পায়েসে: নাটোরের পাটারী গুড় শীতের পিঠা, পুলি, পায়েসে অতুলনীয় স্বাদ এনে দেয়।
মিষ্টি তৈরিতে: গুড় সন্দেশ, নারিকেল মিষ্টি, মোয়া—সবকিছুর জন্য আদর্শ উপাদান।
দৈনন্দিন খাবারে: চা, দুধ বা ভাতের সঙ্গে খেলে পাওয়া যায় গ্রামের শীতের আসল স্বাদ।

সংরক্ষণ পদ্ধতি

পাত্র:মাটির পাত্র বা কাঁচের বোতলে রাখলে পাটারী গুড় দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
স্থান: শীতল, শুকনো ও আলোবিহীন স্থানে সংরক্ষণ করুন।
তাপমাত্রা: আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন এবং প্যাকেট খোলার পর ভালোভাবে বন্ধ রাখুন।

নাটোরের পাটারী গুড়— শুধু একটি মিষ্টি নয়, এটি বাংলাদেশের শীতের ঐতিহ্যের মিষ্টি প্রতীক।
প্রতিটি টুকরায় আছে মাটির ঘ্রাণ, যত্নের ছোঁয়া আর প্রকৃতির খাঁটি মিষ্টি।